×
শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ - হাফিযাহুল্লাহ - একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেন। প্রশ্ন এই :(খুবই লোভনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ আমি এক কোম্পানিতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি। আমার কাজের ধরনটা হবে কোম্পানির গবেষণাগারে শূকরের জিন বিষয়ে গবেষণা করা। এসব গবেষণার সর্বশেষ উদ্দেশ্য হল শূকরের জাত ও উৎপানে উন্নয়ন সাধন। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে শূকরের সংখ্যা পরিবর্ধন ও শূকরের গোশতের বৈশিষ্ট উন্নতকরণ এবং মানুষের ব্যবহারের জন্য তা বাজারে ছড়িয়ে দেয়া। অর্থাৎ আমার বেতনের উৎস হবে মানুষ কর্তৃক শূকরের গোশত ক্রয় ও ব্যবহার। এখন প্রশ্ন হল, এ ধরনের উৎস থেকে অর্জিত সম্পদ কি বৈধ হবে? আমি কি চাকরিটা নেব? না প্রত্যাখ্যান করব? দ্রুত উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ হব যাতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পরি। আল্লাহ আপনাদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।)

প্রশ্ন খুবই লোভনীয় সুযোগ-সুবিধাসহ আমি এক কোম্পানিতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছি। আমার কাজের ধরনটা হবে কোম্পানির গবেষণাগারে শূকরের জিন বিষয়ে গবেষণা করা। এসব গবেষণার সর্বশেষ উদ্দেশ্য হল শূকরের জাত ও উৎপানে উন্নয়ন সাধন। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে শূকরের সংখ্যা পরিবর্ধন ও শূকরের গোশতের বৈশিষ্ট উন্নতকরণ এবং মানুষের ব্যবহারের জন্য তা বাজারে ছড়িয়ে দেয়া। অর্থাৎ আমার বেতনের উৎস হবে মানুষ কর্তৃক শূকরের গোশত ক্রয় ও ব্যবহার। এখন প্রশ্ন হল, এ ধরনের উৎস থেকে অর্জিত সম্পদ কি বৈধ হবে? আমি কি চাকরিটা নেব? না প্রত্যাখ্যান করব? দ্রুত উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ হব যাতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পরি। আল্লাহ আপনাদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।

উত্তর আলহামদু লিল্লাহ
শূকরের গোশত মুসলমানের জন্য হারাম, কুরআন মাজীদের ইরশাদ হয়েছে,

﴿ قل لا أجد فيما أوحي إلي محرماً على طاعم يطعمه إلا أن يكون ميته أو دما مسفوحا أو لحم خنزير فإنه رجسٌ أو فسقاً أهل لغير الله به فمن اضطر غير باغٍ ولا عادٍ فإن ربك غفورٌ رحيمٌ ﴾ [ الأنعام / 145 ].


( বল, যা কিছু ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোনো হারাম খাদ্য পাই না কোনো ভক্ষণকারীর জন্য, যা সে ভক্ষণ করে ; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শূকরের গোশত এটা অপবিত্র, অথবা এমন অবধৈ যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য যবেহ করা হয়েছে। তবে যে ব্যক্তি নিরুপায় হয়ে, অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে, তা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে, তাহলে নিশ্চয় তোমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ) [সূরা আল আনআম:১৪৫]

অনুরূপভাবে শূকরের গোশতের ক্রয়-বিক্রয়ও নিষিদ্ধ ।

জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কা বিজয়ের বছর বলতে শুনেছেন, আর তখন তিনি মক্কায় ছিলেন, যে ( নিশ্চয় আল্লাহ মদ, মৃত, শূকর ও মূর্তি বিক্রয় হারাম করেছেন। প্রশ্ন করা হল, য়্যা রাসূলাল্লাহ, মৃতের চর্বির ব্যাপারে আপনার কি রায়? তা দিয়ে তো জাহাজে প্রলেপ দেয়া হয়, চর্মে তৈল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা হয় । উত্তরে তিনি বললেন, ' না, ওটা হারাম ' , এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ ইহুদিদেরকে নিপাত করুন, আল্লাহ যখন মৃতের চর্বি হারাম করলেন তখন তারা তা গলাল অতঃপর বিক্রয় করে তার মূল্য ভক্ষণ করল। ) বুখারী : ১২১২, মুসলিম: ১৫৮১

অতঃপর আল্লাহ যখন কোনো জিনিসকে হারাম করেন তিনি তার মূল্যকেও হারাম করেন। তদ্রূপভাবে যে কাজ হারাম পর্যন্ত পৌঁছার উসিলা-মাধ্যম হয় তাও হারাম বলে গণ্য। আর উসিলা বা মাধ্যমের হুকুম মূল হারাম বিষয়েরই হুকুম। হুকুমের দিক থেকে এ দুয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। উপরন্তু মুসলমানের জন্য ফাসেকদেরকে শরীয়তবিরোধী কাজকর্মে সহায়তা করা বৈধ নয়। মুসলমানের বরং উচিত হল, যতদূর সম্ভব, তাদের শরীয়তবিরোধী কাজকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়ানো, তাদেরকে এহেন কর্ম থেকে বারণ করা। তাদের জন্য হারাম বস্তুর উন্নয়নে কাজ করে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।
আপনি কি পছন্দ করেন যে, হারাম বস্তুসমূহের উন্নয়ন, সৌন্দর্য বর্ধন, ও উৎসাহ প্রদানের যন্ত্র হবেন এবং এসব হারাম বস্তু প্রচারে ও ব্যবহারে সহায়কের ভূমিকা পালন করবেন?
আমার তো মনে হয় আপনি বলবেন: 'নাউযু বিল্লাহ, আমি তো নিজের জন্য এমন জিনিস কখনো করব না যা আমার সৃষ্টিকর্তা পছন্দ করেন না। যত বেতনই দেওয়া হোক না কেন আমি এ কাজ কখনো করব না। রিযক আল্লাহ হাতে।' সে হিসেবে আপনার উচিত হবে অন্য কোনো হালাল কাজ তালাশ করা। আল্লাহ আমাদরেকে হালাল রিযক পর্যাপ্ত পরিমাণে দিন, হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।