হায়েযের সময় কুরআন পড়ার বিধান
এ আইটেমটি নিম্নোক্ত ভাষায় অনূদিত
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
হায়েযের সময় কুরআন পড়ার বিধান
[বাংলা– Bengali – بنغالي ]
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
2014-1435
﴿ قراءة القرآن أثناء الحيض ﴾
« باللغة البنغالية »
الشيخ محمد صالح المنجد حفظه الله
ترجمة: ثناء الله نذير أحمد
مراجعة:د/ أبو بكر محمد زكريا
2014 - 1435
হায়েযের সময় কুরআন পড়ার বিধান
প্রশ্ন: নারীরা হায়েযের সময় কি কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে ?
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ,
এ মাসআলার বিষয়ে আলেমগণের দুটি মত রয়েছে।
অধিকাংশ আলেমের মত হচ্ছে, হায়েযের সময় ঋতুমতী নারীর কুরআন পড়া হারাম, যতক্ষণ না সে পবিত্র হয়। এ বিধান থেকে তারা কাউকে বাদ দেন না, তবে যিকর ও দোয়া হিসেবে যা পড়া হয়, এবং যা পড়ার সময় তিলাওয়াতের নিয়ত করা হয় না শুধু তার অনুমতি প্রদান করেন, যেমন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রাজিউন, রাবান্না আতিনা... ইত্যাদি, যা কুরআনে রয়েছে ও যা যিকর অধ্যায়ভুক্ত।
তারা নিষেধাজ্ঞার উপর কয়েকটি দলিল পেশ করেন, যেমন:
১. ঋতুমতী নারী জুনুবি তথা বড় অপবিত্র ব্যক্তির ন্যায়, কারণ উভয়ের উপর গোসল ফরয। আলী রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন,
«أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يعلمهم القرآن وكان لا يحجزه عن القرآن إلا الجنابة »
নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন, জানাবত ব্যতীত কোনো বস্তু তাকে কুরআন থেকে বিরত রাখত না"।[1]
২. ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا تقرأ الحائض ولا الجنب شيئاً من القرآن»
“ঋতুমতী ও জুনুবি কুরআনের কোনো অংশ পড়বে না"।[2] হাদিসটি দুর্বল, কারণ তার সনদে ইসমাইল ইবনে আইয়াশ রয়েছেন। হাদিস বিশারদদের গবেষণায় প্রমাণিত, ইসমাইল ইবনে আইয়াশ যখন হিজাজিদের থেকে বর্ণনা করেন, তখন তার হাদিস দুর্বল হয়। আর এটা তাদের থেকেই বর্ণিত। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন: “হাদিস বিশারদদের ঐকমত্যে এ হাদিস দুর্বল"।[3]
কতক আহলে ইলম বলেন, ঋতুমতী নারীর জন্য কুরআন পড়া বৈধ, এটা ইমাম মালিকের মাযহাব, ইমাম আহমদ থেকে এরূপ একটি বর্ণনা রয়েছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. এ মত গ্রহণ করেছেন। ইমাম শাওকানি রহ. এ মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ মতের স্বপক্ষে তারা কয়েকটি দলিল পেশ করেন:
১. কুরআন পড়া মূলত বৈধ ও সাওয়াবের কাজ, কোনো দলিল ব্যতীত কাউকে কুরআন থেকে বিরত রাখা যাবে না। অতএব ঋতুমতী নারীকে বিনা দলিলে কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিষেধ করা যাবে না। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন: ঋতুমতী নারীকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিষেধ করার উপর সহি-স্পষ্ট কোনো দলিল নেই। তিনি আরো বলেন: সর্বজন স্বীকৃত যে, নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নারীরা ঋতুমতী হত, কিন্তু তিনি তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিষেধ করতেন না, যেমন তাদের যিকর ও দোয়া থেকে নিষেধ করতেন না।
২. আল্লাহ তা'আলা কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করার নির্দেশ দিয়েছেন, তিলাওয়াতকারীর প্রশংসা করেছেন, তার জন্য অনেক সাওয়াব ও প্রতিদানের ওয়াদা করেছেন, তাই প্রমাণিত কোনো দলিল ব্যতীত কাউকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিষেধ করা যাবে না। আমরা পূর্বে বলেছি, এমন কোনো শক্তিশালী দলিল নেই, যার ভিত্তিতে ঋতুমতী নারীকে কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিষেধ করা যায়।
৩. ঋতুমতী নারীর উপর কুরআনুল কারিম তিলাওয়াতের নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য জুনুবি ব্যক্তির সাথে তাকে কিয়াস-তুলনা করা এক বিপরীত বস্তুর সাথে অপর বিপরীত বস্তুর তুলনা করার ন্যায়। কারণ জুনুবি ব্যক্তি নিজ ইচ্ছায় গোসল করে নাপাকি দূর করতে সক্ষম, ঋতুমতী নারী এরূপ নয়। আবার ঋতুমতী নারীর হায়েযের সময় সাধারণত লম্বা হয়, পক্ষান্তরে জুনুবি ব্যক্তির উপর সালাতের সময় হলেই গোসল ফরয হয়।
৪. ঋতুমতী নারীর উপর কুরআনুল কারিম তিলাওয়াতের নিষেধাজ্ঞা জারি করার অর্থ তাকে সাওয়াব থেকে মাহরূম করা, যে কারণে নারী কুরআন ভুলতে বসে, অথবা শিক্ষা দেওয়া বা শিক্ষা করা থেকে বঞ্চিত হয়।
উপরের দলিল থেকে স্পষ্ট হল যে, যারা বলেন ঋতুমতী নারীর জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা বৈধ, তাদের দলিল শক্ত, তবে সে যদি সতর্কতা অবলম্বন করে ও ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা হলেই তিলাওয়াত করে, তাহলে সেটা ভালো ও সাবধানতার পথ।
একটি বিষয়ে সতর্ক করা জরুরি যে, ঋতুমতী নারী শুধু মুখস্থ কুরআন পড়বে, মুসহাফ স্পর্শ করে পড়া তার জন্য বৈধ নয়। আলেমদের বিশুদ্ধ মতে ঋতুমতী নারী ও নাপাক ব্যক্তির জন্য কুরআন স্পর্শ করা হারাম, কারণ আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:
﴿ لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ٧٩ ﴾ [الواقعة: ٧٩]
“পবিত্র সত্বাগণ ব্যতীত কেউ তাকে স্পর্শ করে না"।[4]
কুরআনের এ আয়াত ব্যাপক, মানুষ ও মালায়েকা-ফেরেশতা সবাই তার অর্ন্তভুক্ত। দ্বিতীয়ত আমর ইবনে হাযম রাদিয়াল্লাহু 'আনহুর চিঠিতে এসেছে, যা ইয়ামানবাসীদের জন্য নবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখেছেন:
«ألا يمس القرآن إلا طاهر»
“পবিত্র সত্বা ব্যতীত কেউ যেন কুরআন স্পর্শ না করে"।[5]
হাফিয ইবনে হাজার রহ. বলেন: প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণে একদল ইমাম হাদিসটি সহি বলেছেন। শাফেয়ি রহ. বলেন: মুহাদ্দিসদের নিকট প্রমাণিত যে, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি। ইবনে আাব্দুল বার রহ. বলেন: ঐতিহাসিকদের নিকট এ চিঠি প্রসিদ্ধ। আহলে ইলমের নিকট এত প্রসিদ্ধ যে, তার সনদের প্রয়োজন হয় না। ব্যাপক পরিচিত ও সবার নিকট সমাদৃত হওয়ার কারণে মুতাওয়াতির হাদিসের ন্যায়। শায়খ আলবানি রহ. হাদিসটি সহি বলেছেন।[6]
অতএব ঋতুমতী নারী যদি মুসহাফ দেখে পড়তে চায়, তাহলে তার শরীর থেকে পৃথক কোনো বস্তু দ্বারা কুরআন ধরে পড়বে, যেমন কাপড়ের পবিত্র টুকরা, অথবা হাত মোজা পড়ে নিবে, অথবা কোনো লাঠি বা কলম দ্বারা পৃষ্ঠা উল্টাবে। মুসহাফের সাথে সেলাই করা গিলাফ বা তার সাথে জোড়া লাগানো কভার মুসহাফের ন্যায় অযু ব্যতীত স্পর্শ করা যাবে না।
আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।
[1] আবু দাউদ: (১/২৮১), তিরমিযি: (১৪৬), নাসায়ি: (১/১৪৪), ইবনে মাজাহ: (১/২০৭), আহমদ: (১/৮৪), ইবনে খুযাইমাহ: (১/১০৪), ইমাম তিরমিযি রহ. হাদিসটি হাসান ও সহি বলেছেন। ইবনে হাজার রহ. বলেন, বাস্তুত হাদিসটি হাসান, দলিল হিসেবে পেশ করার উপযুক্ত।
[2] তিরিমিযি: (১৩১), ইবনে মাজাহ: (৫৯৫), দারাকুতনি: (১/১১৭), বায়হাকি: (১/৮৯)
[3] মাজমুউল ফতোয়া: (২১/৪৬০), আরো দেখুন: নাসবুর রায়াহ: (১/১৯৫), আত-তালখিসুল হাবির: (১/১৮৩)
[4] সূরা ওয়াকিয়াহ: (৭৯)
[5] মালিক: (১/১৯৯), নাসায়ি: (৮/৫৭), ইবনে হিব্বান: (৭৯৩), বায়হাকি: (১/৮৭),
[6] দেখুন: তালখিসুল হাবির: (৪/১৭), নাসবুর রাইয়াহ: (১/১৯৬), ইরওয়াউল গালিল: (১/১৫৮), হাশিয়াহ ইবনে আবেদিন: (১/১৫৯), আল-মাজমু: (১/৩৫৬), কাশশাফুল কানা': (১/১৪৭), আল-মুগনি: (৩/৪৬১), নায়লুল আওতার: (১/২২৬), মাজমুউল ফতোয়া: (২১/৪৬০), আশ-শারহুল মুমতি, লি ইবনে উসাইমিন: (১/২৯১)