জাবালে ‘আরাফা (জাবালে রহমত)
ক্যাটাগরিসমূহ
Full Description
জাবালে ‘আরাফা (জাবালে রহমত)
جبل عرفة (جبل الرحمة)
< بنغالي- Bengal - বাঙালি>
একদল বিজ্ঞ আলেম
جماعة من العلماء
অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফ্ফান
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ترجمة: محمد عبد الرب عفان
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
জাবালে ‘আরাফা (জাবালে রহমত)
প্রথমত: পরিচয়:
উঁচু উঁচু পাহাড়ের মাঝে এমন কঠিন বড় বড় পাথর খণ্ডের পরস্পর লাগানো সাজানো একটি ছোট পাহাড় যার পাথর সবগুলো কঠিন প্রকৃতিরও নয় আবার সহজও নয়। যা জাবালে সাদের পাদদেশে ‘আরাফার পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত। উচ্চতা দক্ষিণ পার্শ্ব দিয়ে প্রায় ৬৫ মি.। পাহাড়টি বহুনামে পরিচিত। যেমন, ইলাল, জাবালে ‘আরাফা, জাবালে রহমত, জাবালে দো‘আ, জাবালে মুশাহ, জাবালে কুবকুব ও জাবালে করীন।
তবে দু’টি নামই বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত, আর তাহলো, জাবালে ইলাল ও জাবালে ‘আরাফা।
দ্বিতীয়ত: পাহাড়টির হাকীকত বা রহস্য:
সকল মাযহাবের মুসলিম মনীষিগণ বর্ণনা করেন যে, এ পাহাড় সম্পর্কে বিশেষ কোনো কিছুই প্রমাণিত হয় নি; বরং তা ‘আরাফার অন্যান্য ভূমির মতোই। অনুরূপ তারা এও প্রমাণ করেন যে, তার উপর আরোহণ করাও কোনো শরী‘তসম্মত আমল নয় এবং এর ব্যাপারে হজেরও কোনো বিধি-বিধান নেই।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী শারহুল লুবাবের ৮৪ নং পৃষ্ঠায় বলেন: ‘‘এই পাহাড়ে ওঠার কোনো ভিত্তি নেই; বরং তা একটি নিকৃষ্ট বিদ‘আত।’’
তিনি আরোও বলেন (পৃষ্ঠা-২২৪): বিনা বাধা ও সংকীর্ণতায় ‘আরাফাতের যেখানেই উপস্থিত হবে সেখানেই অবস্থান করবে। পক্ষান্তরে পাহাড়ের উপর লোকদের আরোহণ করা, লোকদের তার উপর অবস্থান ও নির্ধারিত সময়ের পূর্বে ও পরে তার উপর অবস্থান করা জঘন্য বিদ‘আতেরই অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম ইবনুল হাজেব আল-মালেকী রহ. বলেন: এ পাহাড়ের নিকট যা কিছু লোকেরা নতুন নতুন আমল করে থাকে তা বিদ‘আতেরই অন্তর্ভুক্ত।
অনুরূপ সেখানে ‘আরাফার রাতে আগুন জ্বালানো এবং এর জন্য গুরুত্বারোপ করে স্বীয় দেশ থেকে আগরবাতি মোমবাতি সাথে নিয়ে আসা এবং তাতে আরোহণ ও অবতরণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ, নিঃসন্দেহে এ সবই এ পবিত্র স্থানে মুশরিকদের ন্যায় করা কর্ম ও গুমরাহী-ভ্রষ্টতা।
আল্লামা শানকীতি মালেকী রহ. তার প্রসিদ্ধ তাফসীর ‘‘আদ্বওয়াউল বায়ান’’ ৫/২৬৩-এ বলেন: ‘‘জেনে রাখুন! সাধারণ জনগণ যেভাবে জাবালে রহমতে আরোহণ করে এর কোনো ভিত্তি নেই, তাতে কোনো ফযীলত নেই। কেননা এ ব্যাপারে কোনো কিছুই বর্ণিত হয় নি; বরং তা ‘আরাফার অন্যান্য সমস্ত এলাকার মতই এবং ‘আরাফার সমস্ত স্থানই অবস্থানের স্থল।
আল-জুওয়াইনী আশ-শাফে‘ঈ রহ. বলেন: ‘আরাফার মধ্যবর্তী স্থানে একটি পাহাড় রয়েছে যাকে বলা হয় জাবালে রহমত (রহমতের পাহাড়) তার উপর উঠাতে কোনো নেকী নেই, যদিও সাধারণ মানুষ তা করে থাকে।
ইমাম নাওয়াওয়ী আশ-শাফে‘ঈ তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘‘আল-মাজমূ‘’’ (৮/১০৭)-তে বলেন: সাধারণ জনগণের মধ্যে ‘আরাফায় অবস্থিত জাবালে রহমতে অবস্থানের প্রতি গুরুত্বের ব্যাপারে যা কিছু প্রসিদ্ধ রয়েছে (যা ইতোপূর্বেও বর্ণনা করা হয়েছে) এবং ‘আরাফার অন্যান্য স্থান হতে তার প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া, এমন কি কারো কারো অজ্ঞতা এমন স্তরে পৌঁছে যে, তাতে অবস্থান না করলে ‘আরাফা অবস্থানই সিদ্ধ হবে না। এমন মনে করা স্পষ্ট ভ্রান্তি ও সুন্নাতের পরিপন্থী।
এ পাহাড়ের উপর আরোহণের ব্যাপারে, নির্ধারিত ফযীলত প্রমাণ করার জন্য যাদের বর্ণনার প্রতি নির্ভর করা যায়, তাদের কারো পক্ষ থেকে কিছুই উল্লেখ নেই; বরং তা ‘আরাফার অন্যান্য সকল ভূমির মতোই।
আল-মুহিব আতত্বাবারী আশ-শাফে‘ঈ রহ. ‘আল-কিরা ফী সাকিনি উম্মুল কুরা’ গ্রন্থের (পৃষ্ঠা ৩৮৬) তে বলেন: ‘‘যে পাহাড়টিতে জনগণ আরোহণের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে থাকে তার ব্যাপারে কোনো ধরণের হাদীস বা দলীল সাব্যস্ত নেই।’’
ইবন জামা‘আ আশ-শাফে‘ঈ রহ. হিদায়াতুস সালেকে বলেন: ‘‘সাধারণ জনগণের মধ্যে ‘আরাফার অন্যান্য স্থান হতে জাবালে রহমতে অবস্থানের অগ্রাধিকার দেওয়া বা সেখানেই অবস্থান করতে হবে এমন বিশ্বাস এবং অবস্থানের সময় হওয়ার পূর্বে সেখানে তাদের আনুষ্ঠানিকতা উকূফের পূর্ব রাতে তাদের সেখানে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালান ও এর প্রতি গুরুত্বারোপ করে তা নিজ দেশ হতেই বহন করা এবং তাতে আরোহণ-অবতরণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সংমিশ্রন এক বড় ভ্রান্তি ও অজ্ঞতা এবং সালাফে সালেহীনের অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর এক জঘন্য আবিস্কার। আমরা আল্লাহর নিকট এর ও যাবতীয় বিদ‘আতের অপসারণ কামনা করি।
ইবন তাইমিয়্যা আল-হাম্বালী রহ. তার মাজমু‘ ফাতাওয়ায় (২৬/১৩৩) বলেন: ‘‘সেখানে (‘আরাফায়) যে পাহাড়টি রয়েছে তাতে আরোহণ করা সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’’
তিনি আল-ইখতিয়ারাত আল ইলমিয়্যাহতে (৯৬) আরো বলেন: ‘‘জাবালে রহমতে আরোহণ করা ঐকমত্যে (ইজমা কর্তৃক) শরী‘আতসম্মত নয়।’’
আল-মারদাউই আল-হাম্বলী তার ‘‘আল-ইনসাফ’’ (৪/২৯) গ্রন্থে বলেন: সুন্নাতসম্মত হলো নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থান স্থল নিশ্চিত করা; কিন্তু জাবালে রহমতের ব্যাপারে কোনো দলীল সাব্যস্ত নেই।
তৃতীয়ত: কোনো কোনো হাজী জাবালে রহমতে যে সব বিদ‘আত ও কুসংস্কারে পতিত হয়ে থাকে:
জাবালে ‘আরাফায় অনেক হাজীই বেশ কিছু বিদ‘আত ও সুন্নাত পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হয়। তার কারণ হলো তাদের নিকট এ পাহাড়ের পবিত্রতা ও তার বিশেষ বৈশিষ্ট থাকার ভ্রান্ত বিশ্বাস। তাদের এ কর্ম যে ভ্রান্তিতে পূর্ণ তা প্রমাণে ইতোপূর্বে আলিমদের মতামত বর্ণনা করা হয়েছে; যেন হাজীগণ সে সব বিদ‘আত ও সুন্নাত পরিপন্থী কর্ম থেকে সতর্ক হন। তার মধ্য হতে নিম্নে কতিপয় উল্লেখ করা হলো:
১। ‘আরাফার অন্যান্য স্থান হতে এ স্থানের ফযীলত বেশি মনে করা।
২। পাহাড়ের উপর খুতবা ও সালাত আদায় করা।
৩। পাহাড়ে ‘আরাফায় অবস্থানের পূর্ব রাত্রিতে মোমবাতি ও আগুন জ্বালানো।
৪। পাহাড়ের ধুলো-বালি নেওয়া।
৫। পিলার ছোয়া ও চুম্বন করা।
৬। পিলারের দিকে নামায আদায় করা।
৭। পিলারের নিকট দো‘আর প্রবণতা ও তার দিক হয়ে হাত তুলে দো‘আ করা।
৮। পিলারে লেখা-লেখি করা।
৯। পিলারের চতুর্দিকে ত্বাওয়াফ করা।
১০। সেখানে কাপড় বা সুতা বাঁধা।
১১। সেখানে বিভিন্ন ম্যাসেজ লিপিবদ্ধ করা বা চুল, টাকা-পয়সা, চিত্রাঙ্কন ও নেকড়া ইত্যাদি নানা বিশ্বাসে স্থাপন করা। যেমন, যেন আবার সেখানে ফিরে আসতে পারে, বা অমুকে হজ করতে পারে, অসুস্থ লোক সুস্থ হয়ে যায়, সন্তান হয় না তার সন্তান হয়।
১২। যে হজ করেনি তাকে সেখান থেকে আহ্বান করা যেন সে আগামী বছর হজ করতে আসতে পারে।
ইত্যাদি বিদ‘আত, শরী‘আত পরিপন্থী ও কুসংস্কারে সেখানে তারা লিপ্ত, আল্লাহ যে সবের কোনো দলীল অবতীর্ণ করেন নি।