মীলাদুন্নবী বিদ‘আত সমর্থনকারীর প্রতিবাদ
এ আইটেমটি নিম্নোক্ত ভাষায় অনূদিত
ক্যাটাগরিসমূহ
উৎস
Full Description
মীলাদুন্নবী বিদ'আত সমর্থনকারীর প্রতিবাদ
الرد على من استحسن شيئًا من البدع كالاحتفال بالمولد النبوي
< بنغالي- Bengal - বাঙালি>
শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
الشيخ محمد صالح المنجد
অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ترجمة: ثناء الله نذير أحمد
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
মীলাদুন্নবী বিদ'আত সমর্থনকারীর প্রতিবাদ
প্রশ্ন: নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি: বিষয়টি তর্ক বরং ঝগড়ার রূপ নিয়েছে, যারা বলে মীলাদুন্নবী বিদ'আত এবং যারা বলে মীলাদুন্নবী বিদ'আত নয় উভয় পক্ষের মধ্যে। যারা বলে মীলাদুন্নবী বিদ'আত, তাদের দলীল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে অথবা সাহাবীগণের যুগে অথবা কোনো একজন তাবে'ঈর যুগে এ মীলাদুন্নবী ছিল না। অপরপক্ষ এর প্রতিবাদ করে বলে: তোমাদের কে বলেছে, আমরা যা কিছু করব, তার অস্তিত্ব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে অথবা সাহাবীগণের যুগে অথবা তাবেঈদের যুগে থাকা চাই। উদাহরণতঃ আমাদের যুগে হাদিস শাস্ত্রের দু'টি শাখা 'রিজাল শাস্ত্র' ও 'জারহ ও তা'দিল শাস্ত্র' ইত্যাদি বিদ্যমান, এগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ছিল না, এ জন্য কেউ এর প্রতিবাদ করে নি। কারণ, নিষিদ্ধ হওয়ার মূল যুক্তি হচ্ছে নতুন আবিষ্কৃত বিদ'আত শরী'আতের মূলনীতি বিরোধী হওয়া; কিন্তু মীলাদুন্নবী বা মীলাদ মাহফিল কোন মূলনীতি বিরোধী? অধিকাংশ তর্ক এ নিয়েই সৃষ্টি হয়। তারা আরও দলীল পেশ করে যে, ইবন কাসীর রহ. মীলাদুন্নবী সমর্থন করেছেন। দলিলের ভিত্তিতে বিশুদ্ধ কোনটি?
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ
প্রথমত: প্রথমত জানা প্রয়োজন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম তারিখ নির্দিষ্টভাবে নির্ণয় সম্ভব হয় নি, এ ব্যাপারে আলেমদের বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। ইবন আব্দুল বার মনে করেন, রবিউল আউয়াল মাসের দুই তারিখে তার জন্ম হয়েছে। ইবন হাযম প্রাধান্য দেন রবিউল আউয়াল মাসের আট তারিখ। কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসের দশ তারিখ, যেমন আবু জা'ফর বাকের। কেউ বলেছেন রবিউল আউয়াল মাসের বারো তারিখ। যেমন, ইবন ইসহাক। কেউ বলেছেন, তিনি রমযান মাসে জন্ম গ্রহণ করেছেন। যেমন, ইবন আব্দুল বার যুবাইর ইবন বাক্কার থেকে বর্ণনা করেছেন। দেখুন: ইবন কাসীর, আস-সিরাতুন নববিয়াহ, পৃষ্ঠা: (১৯৯-২০০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে আলেমদের এ মতবিরোধই প্রমাণ করে যে, এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ জামা'আত ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিক মহব্বতকারী সাহাবায়ে কেরাম তার জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে নিশ্চিত ও চূড়ান্ত ছিলেন না, এ দিনটি পালন করা তো পরের কথা। এ দিন উদযাপন ছাড়াই মুসলিমদের কয়েক শতাব্দী গত হয়েছে, অবশেষে ফাতেমী নামে বাতেনী-শিয়াদের একটি বদ-দীন ফিরকা এ দিনটির প্রচলন ও সূচনা করে।
শাইখ আলী মাহফুয রহ. বলেন: “সর্বপ্রথম এ দিনটি উদযাপন করা হয় মিসরের কায়রোয়: ফাতেমী খলিফারা চতুর্থ শতাব্দীতে এর প্রচলন আরম্ভ করে। তারা ছয়টি মীলাদ বা জন্ম উৎসব প্রবর্তন করে: মীলাদুন্নবী, মীলাদে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, মীলাদে ফাতেমাতুয যাহরা রাদিয়াল্লাহু আনহা, মীলাদে হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এবং তখনকার খলিফার মীলাদ। সেই থেকেই তাদের দেশে এ মীলাদগুলো (জন্মানুষ্ঠান) যথারীতি পালন করা হচ্ছিল। অবশেষে এক সময়কার সেনাবাহিনী প্রধান আফজাল এসব মীলাদ রহিত করে দেন। খলিফা আমের বিআহকামিল্লাহ নিজ শাসনকালে পুনরায় এসব মীলাদ চালু করেন, অথচ মানুষ এসব মীলাদ ভুলতে আরম্ভ করেছিল। সপ্তম শতাব্দীতে 'ইরবিল' শহরে সর্বপ্রথম এ মীলাদ আরম্ভ করেন বাদশাহ আবু সা'ঈদ, সেই থেকে আজ পর্যন্ত চলে আসছে তা, বরং তাতে আরও বৃদ্ধি ও সংযোজন ঘটেছে। তাদের রিপু ও প্রবৃত্তির চাহিদা মোতাবেক সব কিছু তারা এতে যোগ করেছে। তাদেরকে এর প্রত্যাদেশ করেছে মানব ও জিন্ শয়তানেরা"। (আল-ইবদা ফি মাদাররিল ইবতেদা, পৃষ্ঠা নং ২৫১)
দ্বিতীয়ত: প্রশ্নে উল্লিখিত মীলাদুন্নবী উদযাপনকারীরা বলেছে: “তোমাদের কে বলেছে, আমরা যা কিছু করব, তার অস্তিত্ব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে অথবা সাহাবীগণের যুগে অথবা তাবেঈদের যুগে থাকা চাই"। এর থেকে প্রকাশ পায় যে, তারা বিদ'আতের অর্থ জানে না, যে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বহু হাদীসে সতর্ক করেছেন। প্রশ্নে তারা যে মূলনীতি উল্লেখ করেছে, সে মূলনীতি হচ্ছে ইবাদাতের ক্ষেত্রে, যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা হয়। অতএব, এমন কোনো ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যাবে না, যার বিধান বা অনুমোদন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে প্রদান করেন নি। এ মূলনীতি বিদ'আত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিষেধাজ্ঞা থেকেই প্রমাণ হয়। বিদ'আতের সংজ্ঞাই হচ্ছে আল্লাহর অনুমোদনবিহীন ইবাদাত রচনা করা ও তার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার চেষ্টা করা। এজন্যেই হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব ইবাদাতের মাধ্যমে ইবাদাত করেন নি, তোমরাও তার মাধ্যমে ইবাদাত কর না"।
এ প্রসঙ্গে ইমাম মালেক রহ. বলেছেন: “সে যুগে যা দীন ছিল না, এ যুগেও তা দীন বলে গণ্য হবে না"। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে যা দীন ছিল না, সে যুগে যার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা হয় নি, তার পরবর্তী যুগে তা দীনের অংশ হিসেবে গণ্য হবে না।
প্রশ্নকারীর উদাহরণ 'জারহ ও তা'দিল শাস্ত্র' এবং তা এক অনিন্দনীয় বিদ'আত হওয়ার যে দাবী প্রশ্নকারী করেছে তা তো মূলত যারা বিদ'আতকে দু'ভাগে ভাগ করে 'বিদ'আতে হাসানা' ও 'বিদ'আতে সায়্যেআহ' তাদের অভিমত। তারা এর চেয়ে আগে বেড়ে শরী'আতের বিধানের ন্যায় বিদ'আতকেও পাঁচভাগে ভাগ করেছে: (ওয়াজিব, ইস্তেহবাব, ইবাহাত, হারাম ও মাকরুহ)। এ ভাগ সর্বপ্রথম ইয্য ইবন আব্দুস সালাম উল্লেখ করেন, অতঃপর তার শিষ্য ক্বারাফি তার অনুরসণ করে তা উল্লেখ করেছেন।
বিদ'আতের এ ভাগ করার নীতির প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করায় শাতেবী রহ. ক্বারাফির প্রতিবাদ করে বলেন: “বিদ'আতের এ ধরণের ভাগ-বণ্টন স্বরচিত, এর পক্ষে শরী'আতের কোনো দলীল নেই, বরং এ বণ্টন স্ব-যুক্তির বিচারেই বাতিল ও প্রত্যাখ্যাত। কারণ, বিদ'আতের বাস্তবতা হচ্ছে, শরী'আতে যার কোনো দলীল নেই,, না সরাসরি কুরআন-না হাদীস, না তার থেকে নিঃসৃত কোনো নীতি। যদি শরী'আতের এমন দলীল থাকে, যার দ্বারা ওয়াজিব অথবা মানদুব অথবা ইবাহাত প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটা আর বিদ'আত থাকে না; বরং অন্যান্য আদিষ্ট আমলের অন্তর্ভুক্ত অথবা তার মধ্যে উত্তম আমল হিসেবে গণ্য হয়। অতএব, এগুলোকে (ওয়াজিব, ইস্তেহবাব, ইবাহাত, হারাম ও মাকরুহ) বিদ'আত গণ্য করা এবং এগুলোর সপক্ষে ওয়াজিব অথবা মানদুব অথবা ইবাহাতের দলীল বিদ্যমান থাকার দাবি করা, মূলত দুই বিপরীত বস্তুকে একত্র করার শামিল।
হ্যাঁ, এ বণ্টনের অন্তর্ভুক্ত 'মাকরুহ' ও 'হারাম' বিদ'আত হিসেবে সমর্থন যোগ্য, অন্য বিবেচনায় নয়, অর্থাৎ বণ্টন হিসেবে বিদ'আত বিবেচ্য নয়। কারণ নিষেধাজ্ঞার ওপর অথবা মাকরুহ হওয়ার ওপর যদি কোনো দলীল থাকে, তখন সেটা বিদ'আত নয়; বরং তা পাপের অন্তর্ভুক্ত, যেমন হত্যা, চুরি, মদপান ইত্যাদি। অতএব, কোনো বিদ'আতের ক্ষেত্রেই এ বণ্টন কল্পনা করা যায় না, শুধু মাকরুহ ও হারাম ব্যতীত, যেমন বিদ'আতের আলোচনায় বলা হয়।
ক্বারাফি বিদ'আত প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে সাথীদের যে ঐক্য বর্ণনা করেছেন তা ঠিক; কিন্তু তিনি যে বিদ'আতের শ্রেণি বিভাগ বর্ণনা করেছেন তা সঠিক নয়, তদুপরি আরো আগ বাড়িয়ে তিনি যে এর ওপর ঐকমত্যের দাবী করেছেন তা আশ্চর্যের বিষয়! মতবিরোধ সত্ত্বেও এবং ঐক্য ভঙ্গের কারণ জানা থাকার পরও তিনি কিভাবে ঐক্য দাবি করলেন! হয়তো, বরং নিশ্চিত এ ব্যাপারে তিনি তার উস্তাদের অনুসরণ করেছেন কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই।
অতঃপর তিনি (শাতেবী রহ.) এ বণ্টনের ব্যাপারে ইয্য ইবন আব্দুস সালামের কারণ বর্ণনা করেন। তিনি মূলত 'মাসালেহে মুরসালাহ'-কে বিদ'আত নামকরণ করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন: কিন্তু ক্বারাফি কর্তৃক তার শাইখ এবং অন্যান্য মানুষের উদ্দেশ্যের বিপরীতে বিদ'আতের এ ভাগ-বণ্টন বর্ণনা করার কোনো ওযরই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তিনি এ ভাগ-বণ্টনের মাধ্যমে সবার (তার শাইখ ও অন্যান্য মানুষের) ইজমা ও ঐক্যের খেলাফ করেছেন, তাই এ বণ্টন ইজমা ও উম্মতের ঐক্যমতের খেলাফ"। (আল-ই'তিসাম: পৃষ্ঠা নং ১৫২-১৫৩) পাঠকবর্গকে আমরা তার কিতাব দেখার অনুরোধ করছি, কারণ তিনি পরিপূর্ণ রূপে ও সুন্দরভাবে এর প্রতিবাদ করেছেন।
ইয ইবন আব্দুস সালাম তার বিদ'আতের বণ্টন অনুসারে বলেন: ওয়াজিব বিদ'আতের অনেক উদাহরণ রয়েছে।
এক. আল্লাহর কালাম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বুঝার জন্য ইলম নাহু বা আরবি ব্যাকরণ শাস্ত্র নিয়ে মশগুল হওয়া। শরী'আত হিফাযত করার জন্য এ ইলম অর্জন করা ওয়াজিব। কারণ, এ ইলম ব্যতীত শরী'আত হিফাযত করা সম্ভব নয়, আর যা ব্যতীত ওয়াজিব আদায় করা সম্ভব নয়, তা অর্জন করাও ওয়াজিব।
দুই. কুরআন ও হাদীসের অপরিচিত শব্দ মুখস্থ করা।
তিন. উসূলে ফিকাহ লিপিবদ্ধ করা।
চার. সহীহ ও দুর্বল হাদিস পার্থক্য করার জন্য 'জরহ ও তা'দিল শাস্ত্র' শিক্ষা করা। শরী'আতের নীতিমালা দ্বারা প্রমাণিত যে, শরী'আত সংরক্ষণ করা ফরয, যেহেতু এসব ইলম ব্যতীত শরী'আত সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়, তাই এসব ইলম অর্জন করাও ফরয"। (কাওয়েদুল আহকাম ফি মাসালেহেল আনাম: ২/১৭৩)
ইমাম শাতেবী এরও প্রতিবাদ করেছেন, তিনি বলেন: “আর ইযদ্দিনের কথা: 'যা ব্যতীত ওয়াজিব আদায় হয় না, তা অর্জন করাও ওয়াজিব'। এসব ব্যাপারে পূর্বসূরিদের আমল থাকা জরুরী নয়, আর না নির্দিষ্টভাবে শরী'আতের কোনো দলীল এর পক্ষে থাকা জরুরি। কারণ, এগুলো 'মাসালেহে মুরসালাহ'-এর অন্তর্ভুক্ত, বিদ'আতের নয়।" (আল-ই'তিসাম, পৃষ্ঠা নং ১৫৭-১৫৮)
এ প্রতিবাদের সারসংক্ষেপ: এসব ইলমকে শরী'আতের নিন্দনীয় বিদ'আত হিসেবে গণ্য করা ঠিক নয়। কারণ, শরী'আতের সাধারণ বিধান ও তার সাধারণ নীতি এসব ইলমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং এর গুরুত্বের সাক্ষ্য দেয়। অর্থাৎ শরী'আতের যেসব দলীল দীন ও সুন্নত হিফাযত করার নির্দেশ দেয় এবং শরী'আতের জ্ঞান ও কুরআন-হাদিস যথাযথ মানুষের নিকট পৌঁছানোর তাগিদ প্রদান করে, তা এ জাতীয় ইলম অর্জনের প্রতিও উদ্বুদ্ধ করে।
আবার এও বলা যায়: এসব ইলম আভিধানিক অর্থে বিদ'আত, শরয়ী বিদ'আত নয়, শরয়ী সকল বিদ'আতই নিন্দনীয়। আর আভিধানিক বিদ'আতের কতক ভালো আর কতক মন্দ।
ইবন হাজার আসকালানী রহ. বলেছেন: শরী'আতের দৃষ্টিতে সকল বিদ'আত নিন্দনীয়; কিন্তু আভিধানিক অর্থে নিন্দনীয় নয়। কারণ, আভিধানিক অর্থে পূর্বের নমুনা ব্যতীত যে কোন আবিষ্কারই বিদ'আত, কি ভালো কি মন্দ। (ফাতহুল বারি: ১৩/২৫৩)
তিনি আরও বলেন: “البِدَع শব্দ بدعة এর বহুবচন, পূর্বের নমুনাহীন প্রত্যেক আবিষ্কারই বিদ'আত, আভিধানিক অর্থে ভালো-মন্দ সব আবিষ্কার এর অন্তর্ভুক্ত, তবে শর'ঈ পরিভাষায় শুধু মন্দকেই বিদ'আত বলা হয়, যদি শরী'আত অনুমোদিত কোনো বিষয়ে কখনো বিদ'আত ব্যবহার হয়, তাহলে সেটা তার আভিধানিক অর্থে"। (ফাতহুল বারি: ১৩/৩৪০)
ফাতহুল বারির (৭২৭৭) নং হাদীসের টিকায় রয়েছে, শাইখ আব্দুর রহমান আল-বাররাক বলেছেন: “এ বণ্টন হচ্ছে আভিধানিক অর্থে, কিন্তু শর'ঈ অর্থে সকল বিদ'আত গোমরাহী, যেরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وشر الأمور محدثاتها ، وكل بدعة ضلالة»
“আর সবচেয়ে খারাপ বস্তু হচ্ছে বিদ'আত, আর প্রত্যেক বিদ'আত গোমরাহী"। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪৪১)
বিদ'আত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এমন ব্যাপক সাধারণ মন্তব্য থাকা সত্ত্বেও বিদ'আতকে ভাগ করে ওয়াজিব অথবা মুস্তাহাব অথবা মুবাহ বলা দুরস্ত নয়; বরং শরী'আতে প্রত্যেক বিদ'আতই হারাম অথবা মাকরুহ। এ মাকরুহ বিদ'আতের উদাহরণ যেমন ফজর ও আসরের সময়ে নির্দিষ্টভাবে মুসাফাহ করা, যদিও অনেকে বলে এটা মুবাহ তথা বৈধ বিদ'আত।
আরও একটি বিষয় বিবেচনা যোগ্য: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে কোনো বাধা না থাকা এবং সকল আয়োজন বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও মীলাদুন্নবী উদযাপন না করা। মীলাদুন্নবী ও নবীর মহব্বত উভয় সাহাবীগণের মধ্যে বিদ্যমান ছিল, যার ভিত্তিতে তারা ইচ্ছা করলে মীলাদুন্নবী উদযাপন করতে পারতেন, এতে কোনো বাধাও ছিল না -এ সত্ত্বেও যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম মীলাদুন্নবী উদযাপন করেন নি, তাই এটা অবৈধ, যদি বৈধ হতো তাহলে তারা সকলের আগেই এ অনুষ্ঠান পালন করতেন।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন: “অনুরূপ কতক লোকের (মীলাদুন্নবী) আবিষ্কার, তারা হয়তো নাসারাদের অনুকরণে তা পালন করে, যেমন নাসারারা ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মানুষ্ঠান পালন করে থাকে অথবা তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত ও সম্মানের খাতিরে তা পালন করে থাকে, আল্লাহ তাদের এ মহব্বত ও সম্মানের প্রতি সাওয়াব দিতেও পারেন, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিনকে ঈদ হিসেবে পালন করে বিদ'আত করার জন্য কোনো সওয়াব দিবেন না। অধিকন্তু তার জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে দ্বিমত তো রয়েছেই। কারণ, আমাদের পূর্বসূরি ও আদর্শ মনীষী কেউ এটা পালন করেন নি, অথচ তখনো এর দাবি বিদ্যমান ছিল, কোনো বাধা ছিল না, যদি এটা কল্যাণকর হতো অথবা ভালো হতো, তাহলে আমাদের পূর্বসূরিগণই এর বেশি হকদার ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত আমাদের চেয়ে তাদের মধ্যে বেশি ছিল। তারা তাকে আমাদের চেয়ে অধিক সম্মান করতেন। আমাদের চেয়ে তারা কল্যাণের ব্যাপারে অগ্রগামী ছিলেন। বস্তুতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিপূর্ণ মহব্বত ও সম্মানের পরিচয় হচ্ছে, তার আনুগত্য ও অনুসরণ করা, তার নির্দেশ পালন করা এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তার সুন্নত জীবিত করা, তার আনিত দ্বীন প্রচার করা এবং এ জন্য অন্তর-হাত ও মুখ দ্বারা জিহাদ করা, কারণ এটাই আমাদের পূর্বসূরি মুহাজির, আনসার ও তাদের যথাযথ অনুসারীদের নীতি ও আদর্শ ছিল"। (ইকতেদাউস সিরাত, পৃষ্ঠা: ২৯৪-২৯৫)
এটা সরল ও সাধারণ কথা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসরণের মধ্যেই তার প্রতি মহব্বত প্রকাশ পায়। আরও প্রকাশ পায় তার সুন্নতের শিক্ষা বিস্তার ও প্রসার করা এবং তার সুন্নতের ওপর থেকে যে কোনো হামলা প্রতিরোধ করা ইত্যাদিতে। মূলত এটাই ছিল সাহাবাদের পদ্ধতি।
কিন্তু পরবর্তী যুগের লোকেরা নিজেদেরকে ধোকা দিচ্ছে এবং এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শয়তানও তাদের ধোকা দিচ্ছে। তাদের ধারণা এসবের মাধ্যমে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত প্রকাশ করছে; কিন্তু তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত জীবিত করা, তার অনুসরণ করা, তার দিকে দাওয়াত দেওয়া ও মানুষকে তা শিক্ষা দেওয়া এবং তার ওপর থেকে হামলা প্রতিহত করা থেকে অনেক দূরে।
তৃতীয়ত: এ ব্যক্তি যে বলেছে ইবন কাসীর রহ. মীলাদুন্নবী বৈধ বলেছেন, আমাদের সামনে সে এর দলীল পেশ করুক। কারণ, আমরা তার এ ধরণের বক্তব্য সম্পর্কে জানি না, আমরা মনে করি তিনি এ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। আল্লাহ ভালো জানেন।
সমাপ্ত