×
এ ফতওয়াটিতে শিয়াদের হাতে জবেহ করা জন্তু খাওয়া হালাল হবে কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

    শিয়াদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়ার বিধান

    حكم أكل ذبيحة الشيعة

    < بنغالي >

    শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জেদ

    الشيخ صالح المنجد

    —™

    অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: ذاكر الله أبو الخير

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    শিয়াদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়ার বিধান

    প্রশ্ন:

    আমরা শিয়া সমাজে বসবাস করি, যদিও তারা নিজেদের মুসলিম দাবি করে, তবে আপনারা অবশ্যই তাদের কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী আকীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে জানেন। এখন প্রশ্ন তাদের নিজ হাতে যবেহ করা জন্তু তার ওপর যদি আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য খাওয়া বৈধ হবে কি না?। যখন তারা বাজারে বিক্রির জন্য, মাজারের উদ্দেশ্যে, মান্নত পালন এবং মৃতদের উদ্দেশ্যে যবেহ করে থাকে।

    উত্তর:

    আলহামদু লিল্লাহ।

    যবেহকৃত জন্তু হালাল হওয়ার জন্য শর্ত হলো, যবেহকারী মুসলিম অথবা আহলে কিতাব হতে হবে। সুতরাং মুশরিক, অগ্নিপূজক ও মুরতাদদের হাতে যবেহকৃত জন্তু খাওয়া হালাল নয়। আর শিয়াদের এমন কিছু আকীদা ও আমল রয়েছে যা তাদেরকে ইসলামের গণ্ড থেকে বের করে দেয়। যেমন, তাদের বিশ্বাস কুরআন বিকৃত, তাদের ইমামগণ গায়েব জানেন এবং তাদের ইমামগণ নিষ্পাপ, তাদের কোনো ভুল ত্রুটি হয় না ইত্যাদি।

    তারা মৃতদের নিকট ফরিয়াদ করে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে বিপদে তাদেরকে ডাকে, তাদের কাছে সাহায্য চায়, কবরে সাজদাহ করে এবং নবী ও রাসূলদের পর সর্বোত্তম মানব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের গালিদেয়, তাদের কাফির বলে। যারা এ ধরনের আকীদা পোষণ করে বা এ ধরনের কোনো কর্ম করে তারা অবশ্যই ইসলামের বন্ধন থেকে বের হয়ে যাবে। তারা কাফির, তাদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়া মুসলিমের জন্য হালাল নয়। এ বিষয়টি 'ইসলাম কিউ এ' এর ১১৪৮, ১০২৭২ ও ২১৫০০ নং প্রশ্নের উত্তরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

    শিয়া জাফরীয়া তথা ইমামিয়া শিয়াদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়া সম্পর্কে 'ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী উলামা পরিষদ'কে এ বলে জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তারা আলী ও হাসান-হুসাইন রাদিয়াল্লাহু 'আনহুম এবং তাদের অন্যান্য ইমামদেরকে বিপদের সময় ও আনন্দের সময় ডাকে। তাদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়া হালাল হবে কি? তারা উত্তর দেন,

    প্রশ্নকারী যেভাবে উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ তাদের পাশে যেসব শিয়া জাফরীয়াহ (ইমামিয়া ইসনা আশারিয়া শিয়া) রয়েছে তারা আলী, হাসান ও হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম এবং তাদের অন্যান্য ইমামদেরকে বিপদের সময় ও আনন্দের সময় ডাকে, তাহলে তারা অবশ্যই মুশরিক ও মুরতাদ। (নাউযু বিল্লাহ)। তাদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়া হালাল হবে না। কারণ, তাদের হাতে যবেহকৃত জন্তুটি মৃত, যদিও তার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়।

    'ফাতোয়া বিষয়ক স্থায়ী উলামা পরিষদ' (ফাতওয়া আল-লাজনাতুদ দায়েমাহ লিল-ইফতা: ২৬৪/২)

    অনুরূপভাবে 'ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী উলামা পরিষদ'কে আরও জিজ্ঞাসা করা হয় যে, আমি উত্তর সীমান্তে বসবাস করি। আমাদের সাথে ইরাকের কয়েকটি গোত্রের লোক রয়েছে যারা শিয়া মতবাদের অনুসারী। তারা কতক কবর পূজা করে, যাদেরকে তারা হাসান, হুসাইন ও আলী রাদিয়াল্লাহু 'আনহুম বলে আখ্যায়িত করেন। যখন তারা তাদের সামনে দাঁড়ায় তখন তারা বলে, হে আলী, হে হুসাইন ইত্যাদি। আমাদের গোত্রের কিছু লোক তাদের সাথে বিবাহ-সাদীতেও আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাদের অনেক বুঝানোর পরও তারা শোনে নি। আমি শুনেছি তাদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়া যাবে না, তা হালাল নয়। কিন্তু তারা তাদের যবেহ করা জন্তু কোনো প্রকার শর্ত ছাড়াই খায়। উল্লিখিত বিষয়ে আমাদের করনীয় সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানতে চাই।

    এ প্রশ্নের উত্তরে 'ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী উলামা পরিষদ' বলেন,

    প্রশ্নে উল্লিখিত বিষয়গুলো যেমন, আলী, হুসাইন ও হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে উপাস্য হিসেবে ডাকা যদি বাস্তব হয়, তাহলে তারা অবশ্যই মুশরিক, ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত। তাদের নিকট মুসলিম নারীদের বিবাহ দেওয়া বা তাদের নারীদের বিবাহ করা, তাদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়া কখনোই হালাল নয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿وَلَا تَنكِحُواْ ٱلۡمُشۡرِكَٰتِ حَتَّىٰ يُؤۡمِنَّۚ وَلَأَمَةٞ مُّؤۡمِنَةٌ خَيۡرٞ مِّن مُّشۡرِكَةٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَتۡكُمۡۗ وَلَا تُنكِحُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤۡمِنُواْۚ وَلَعَبۡدٞ مُّؤۡمِنٌ خَيۡرٞ مِّن مُّشۡرِكٖ وَلَوۡ أَعۡجَبَكُمۡۗ أُوْلَٰٓئِكَ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلنَّارِۖ وَٱللَّهُ يَدۡعُوٓاْ إِلَى ٱلۡجَنَّةِ وَٱلۡمَغۡفِرَةِ بِإِذۡنِهِۦۖ وَيُبَيِّنُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَكَّرُونَ ٢٢١﴾ [البقرة: ٢٢١]

    “আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহ্বান করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে"[সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২২১]

    শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায, শাইখ আবদুর রাযযাক আফীফী, শাইখ আবদুল্লাহ গুদাইয়ান, শাইখ আবদুল্লাহ ইবন কু'ঊদ। 'ফাতাওয়া লাজনাতুদ দায়েমাহ' (২/২৬৪)

    অনুরূপভাবে শাইখ আব্দুল্লাহ ইবন জাবরীন রহ. কে রাফেযীদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে, তিনি তার উত্তরে বলেন, রাফেযীদের যবেহ করা ও তাদের যবেহকৃত জন্তু খাওয়া হালাল নয়। কারণ, রাফেযীরা অধিকাংশই মুশরিক। তারা সব সময় তাদের মুসিবত ও খুশিতে আলী ইবনে আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডাকে। এমনকি আরাফার মাঠে, তাওয়াফে ও সা'ঈতে আলী রাদিয়াল্লাহু 'আনহুকে এবং তার ছেলেদেরকে ডাকে। আমরা একাধিকবার তাদেরকে এভাবে ডাকতে শুনেছি। এটি নিঃসন্দেহে শির্ক বড় শির্ক এবং ইসলাম থেকে মুরতাদ হওয়া। এ ধরনের কাজ যারা করে তারা হত্যা যোগ্য।

    তারা যেমনিভাবে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করে তেমনিভাবে তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য এমন সব গুণাগুণ সাব্যস্ত করে, যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো মাখলুকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ ধরনের কথা তাদের মুখ থেকে সরাসরি আমরা আরাফার মাঠে শুনেছি। তারা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রব বলে, স্রষ্টা বলে এবং জগতের পরিচালক বলে দাবি করে। তারা আরও দাবি করে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু গায়েব জানেন, তিনি ক্ষতি ও উপকারের মালিক। অনুরূপভাবে তারা কুরআন সম্পর্কে আপত্তি তুলে। তারা বলে সাহাবীরা কুরআনকে পরিবর্তন ও বিকৃতি করছে। কুরআনের কিছু অংশকে সাহাবীরা বাদ দিয়ে দিয়েছে যাতে আহলে বাইত ও তাদের দুশমনদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ কারণে তারা কুরআনের অনুসরণ করে না এবং কুরআনকে দলীল হিসেবে মানে না। তাছাড়া তারা বড় বড় সাহাবীদের গালি দেয়। যেমন প্রথম তিন খলিফা ও সু-সংবাদ প্রাপ্ত ১০ জন সাহাবী সম্পর্কে তারা বিভিন্ন ধরনের অশোভন মন্তব্য করে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাসহ অন্যান্য উম্মুহাতুল মুমিনীন সম্পর্কে তারা বিভিন্ন ধরনের জঘন্য মন্তব্য করে ও তাদের গালি দেয়। তারা প্রসিদ্ধ সাহাবী আবু হুরাইরা, আনাস ও জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের গালি দেয় এবং তাদের থেকে বর্ণিত হাদীসগুলোকে গ্রহণ করে না। তারা তাদেরকে কাফির বলে আখ্যায়িত করে। তারা বুখারী ও মুসলিমের হাদীসকে মানে না। শুধুমাত্র ঐ সব হাদীস মানে যাতে আহলে বাইতের আলোচনা রয়েছে। তারা মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীসের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করে, অথবা তাদের দাবীর সমর্থনে এমন সব হাদীস নিয়ে আসে যা মূলত তাদের দাবী সাব্যস্ত করে না। এতদসত্ত্বেও তারা মুনাফিকী তথা কপটতার আশ্রয় নেয়। তারা মুখে এমন সব কথা বলে যা তাদের অন্তরে নাই। আর তারা অন্তরে এমন কিছু গোপন করে যা তারা কখনো তোমার সামনে প্রকাশ করবে না। তারা বলে, من لا تقية له فلا دين له (যার মধ্যে কপটতা নেই তার কোনো দীন নেই) সুতরাং তারা যতই ভ্রাতৃত্ব কিংবা শরী'আত অনুসরণের দাবী করুক না কেন তাদের দাবিকে কখনোই বিশ্বাস ও গ্রহণ করা যাবে না। নিফাকীই হলো তাদের বিশ্বাস। তাদের অনিষ্টতার বদলা দেওয়ার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহই ভালো জানেন।