×
শিয়ারা মিথ্যাচার করে বলে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জানাযা পড়েন নি। এ ফতোয়াটিতে তাদের মিথ্যাচারের সমুচিত জবাব দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়েছে।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালাল্লামের জানাযায় সাহাবীগণের অংশ গ্রহণ করা

    حضور الصحابة لجنازة رسول الله صلى الله عليه وسلم

    < بنغالي >

    শাইখ সালেহ আল-মুনাজ্জেদ

    الشيخ صالح المنجد

    —™

    অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: ذاكر الله أبو الخير

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    রাসূলের জানাযায় সাহাবীগণের অংশ গ্রহণ

    প্রশ্ন:

    শিয়ারা দাবি করে যে, রাসূলের সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাফন ও জানাযায় উপস্থিত হন নি। বিষয়টি কতটুকু সঠিক? তারা তখন কোথায় ছিলেন? এ বিষয়ে কোনো হাদীস আছে কিনা যদ্বারা তাদের এ দাবিকে খণ্ডন করা যায়?

    উত্তর:

    আলহামদু লিল্লাহ।

    একজন মানুষের সবচেয়ে নিকৃষ্ট গুণ হলো মিথ্যা বলা। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «إِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ، فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ، وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ، وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا»

    “তোমরা তোমাদের নিজেদের মিথ্যা থেকে বাচাও। কারণ, মিথ্যা মানুষকে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। আর গোমরাহী মানুষকে জাহান্নামের পথ দেখায়। কোনো লোক যখন মিথ্যা বলতে থাকে তখন মিথ্যা তার স্বভাবে পরিণত হয়। ফলে আল্লাহর নিকট তার নাম মিথ্যাবাদী হিসেবে লিখা হয়"(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৩৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০৭)

    উম্মতে মুহাম্মাদীর দাবীদারদের মধ্যে শিয়াদের চেয়ে অধিক মিথ্যুক আর কোনো দল আছে বলে আমাদের জানা নেই। এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য যে, ইমামগণ তাদের কিতাবসমূহে যুগ যুগ ধরে তাদের মিথ্যাচারের বিষয়টি মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন এবং তাদের থেকে সতর্ক করেছেন।

    শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “আহলে ইলমগণের বর্ণনা ও সনদ এ বিষয়ে একমত যে, শিয়ারা সবচেয়ে বেশি মিথ্যুক দল। তাদের মিথ্যা বলা ঐতিহাসিক সত্য। এ কারণেই ইসলামের ধারক-বাহক ওলামায়ে কেরাম ও ইমামগণ শিয়াদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে এ কথা জানতেন যে, তারা অধিক মিথ্যুক।"

    ইমাম মালিক রহ.কে রাফেযী শিয়াদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তাদের সাথে কথা বলো না, তাদের থেকে বর্ণনা করো না; কারণ তারা মিথ্যা বলে।

    ইমাম শাফে'ঈ রহ, বলেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যাপারে রাফেযী শিয়াদের থেকে অধিক আর কাউকে আমি দেখি নি।

    ইয়াযিদ ইবন হারূন বলেন, রাফেযী ছাড়া অন্যান্য বিদ'আতী যদি সেদিক দাওয়াত না দেয় তবে তাদের বর্ণনা গ্রহণ করা যায়। কিন্তু রাফেযীদের থেকে নয়। কারণ তারা মিথ্যুক।

    শরীক আল কাযী রহ. বলেন, রাফেযী ছাড়া অন্য যে কোনো ব্যক্তির সাথে দেখা হয় তাদের থেকে ইলম গ্রহণ করি। কিন্তু রাফেযীদের থেকে নয়; কারণ, তারা হাদীস বানায় এবং বানানো হাদীসকে দীন হিসেবে গ্রহণ করে।

    শরীক হলো, শরীক ইবন আব্দুল্লাহ আল-কাযী। তিনি কুফার কাযী ছিলেন। ইমাম সুফিয়ান সাওরী ও আবু হানিফা রহ.-এর সমসাময়িক লোক ছিলেন। তিনি শিয়াদেরই একজন। তিনি মুখে বলেন, আমি একজন শিয়া। একজন শিয়া লোক শিয়াদের সম্পর্কে এমন সাক্ষ্য দিলেন!

    ইমামদের উল্লিখিত উক্তিগুলো আব্দুল্লাহ ইবন বাত্তাহ তার লিখিত কিতাব, 'আল-ইবানাতুল কুবরা' তে বর্ণনা করেছেন। আরও বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন: মিনহাজুস সূন্নাহ আন-নববীয়া: ২৬-২৭/১

    ১১ হিজরি, ১২ই রবিউল আউয়াল, রোজ সোমবার দুপুরের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যান। বুধবারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর সমগ্র মদীনাবাসীরা জানাযা পড়ার পর তাকে দাফন করা হয়। যেমন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদল প্রবেশ করত, তারা তাকবীর বলত সালাত আদায় করত ও দো'আ করত, তারপর তারা বেরিয়ে পড়ত। তারপর আবারও একদল প্রবেশ করত, তারা তাকবীর বলত, সালাত আদায় করত ও দো'আ করত, অতঃপর তারা বেরিয়ে পড়ত যাতে অন্যরা প্রবেশ করতে পারে। (শামায়েলে তিরমিযী, পৃ: ৩৩৮) আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।

    এ সময় মদীনায় উপস্থিত ছিল এমন কোনো সাহাবী খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর জানাযার সালাত আদায় করেন নি। মদীনায় উপস্থিত সবাই তার ওপর সালাতুল জানাযা আদায় করেন। এটি একটি স্পষ্ট বিষয়; এর দলীল প্রমাণ সম্পর্কে গবেষণা করার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ, সাহাবীগণের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান এমনকি তাদের জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয় ছিলেন। যেমন, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,

    «لَمْ يَكُنْ شَخْصٌ أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»

    “তাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক প্রিয় আর কোনো মানুষ ছিল না"। বর্ণনায় তিরমিযী, হাদীস নং ২৭৫৪। আল্লামা আলবানী রহ. সহীহ তিরমিযীতে হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেন।

    কিন্তু কতক লোকের অন্তর ইসলাম ও মুসলিদের প্রতি বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। তারা সব সময় মুসলিমদের বিপক্ষে মিথ্যাচার করতে থাকে এবং তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ রটায়। অথচ সাহাবীগণ নবীদের পর সর্বোত্তম মানব। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই সাক্ষী। তিনি বলেন,

    «خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ»

    “সব চেয়ে উত্তম মানুষ আমার যুগের মানুষ, তারপর যারা আমার যুগের সাথে মিলিত, তারপর যারা তাদের সাথে মিলিত"। বর্ণনায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৬৫২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৩২।

    যারা সাহাবীদের গালি দেয়, তাদের অপবাদ দেয় এবং সম্মানহানি করে, তারা মূলতঃ রাসূলকেই অপবাদ দেয়। কারণ, তারা তার সাথী, শিষ্য ও সহযোগী এবং তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। তারা সবাই যে তার জানাযায় উপস্থিত হয়েছিল সে বিষয়ে একাধিক হাদীস বিদ্যমান। আর বিষয়টি এত স্পষ্ট যে তার জন্য দলীল দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এটি দিবালোকের মতোই স্পষ্ট।

    আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    «لَمَّا كَانَ اليَوْمُ الَّذِي دَخَلَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ أَضَاءَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ ، فَلَمَّا كَانَ اليَوْمُ الَّذِي مَاتَ فِيهِ أَظْلَمَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ ، وَمَا نَفَضْنَا عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الأَيْدِي وَإِنَّا لَفِي دَفْنِهِ حَتَّى أَنْكَرْنَا قُلُوبَنَا»

    “যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় প্রবেশ করেন, সেদিন সবকিছুই আলোকিত হয়ে যায়। আবার যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যান, সেদিন সব কিছুই অন্ধকার হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাফন শেষ করে হাত ঝাড়ার পূর্বেই আমরা যেন আমাদের নিজেদের অন্তরসমূহকে চিনতে পারছিলাম না। বর্ণনায় তিরমিযী, ৩৬১৮, বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে ইবন কাসীর হাদীসটিকে শুদ্ধ বলেন।

    ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু 'আনহা মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যখন তারা তাঁর পিতাকে দাফন করে ফিরে আসে,

    »يَا أَنَسُ ! أَطَابَتْ أَنْفُسُكُمْ أَنْ تَحْثُوا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم التُّرَابَ»

    “হে আনাস! যখন তোমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর মাটি দিচ্ছিলে তখন তোমাদের অন্তরে কি ভালো লাগছিল"? (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৪৬২)

    এত সব প্রমাণাদি থাকা সত্বেও এসব শিয়া মিথ্যুকরা সাহাবীগণের ওপর এত বড় অপবাদ কোত্থেকে নিয়ে আসে?

    যারা দীনের জরুরী বিষয়গুলোকে অস্বীকার করে, কুরআনকে অস্বীকার করে এবং কুরআনের মধ্যে বিকৃতি আছে ও তার কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিভিন্ন প্রকার অপবাদ দেয়, রাসূলের সাহাবী যাদের আলোচনা আল্লাহ তা'আলা কুরআনে চির দিনের জন্য স্থায়ী করে দিয়েছেন, তাদের গালি দেয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত মুতাওয়াতির হাদীসে তাদের ফযীলত প্রমাণিত এবং যাদের বিষয়ে সমগ্র উম্মতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত, তাদের গালি দেয়, তাদের থেকে এ ধরনের অপবাদ ও মিথ্যাচার সংঘটিত হওয়া কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে আছেন আর অচিরেই যারা যুলুম করবে তারা তাদের পরিণতি সম্পর্কে জানতে পারবে।

    আমরা আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন তার দীনকে সাহায্য করেন, তার বাণীকে সমুন্নত রাখেন এবং বাতিল ও বাতিলপন্থীদের অপমান অপদস্থ করে। আল্লাহই ভালো জানেন।

    وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين .