×
সমকামিতা বিষয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে ফতোয়াটি প্রদত্ত হয়েছে। প্রশ্নটি হল- (আমি মুসলমান। আমার বয়স ষোল। আমি সবসময় নামাজ পড়ি ও রোজা রাখি। আমি আমার জীবনে সৎ ও ভদ্র। তবে সমস্যা হল আমি সমকামী। শুরুতে আমি আমার পিতাকে নিয়ে ভাবতাম। আমার মনে হয় জেনিটিক কারণে আমি সমকামী হয়েছি। আমি খারাপ চিত্র দেখি। তবে আমি এ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাই। আমি জীবনে কখনো যৌনকর্মে লিপ্ত হই নি। আমি সত্যি সত্যিই আল্লাহকে ভয় করি। আমি তাঁকে সবসময়ই ডাকি যাতে তিনি আমাকে সাহায্য করেন। আপনার কাছে আমার আকুল আবেদন আপনি আমাকে বাস্তব কিছু পরামর্শ দেবেন যাতে আমি এই দুর্যোগ থেকে রেহাই পেতে পারি।)

    সমকামী এবং তা থেকে মুক্তিকামী

    شاذ جنسياً ويريد العلاج

    < بنغالي- Bengal - বাঙালি>

    ইসলাম কিউ এ

    موقع الإسلام سؤال وجواب

    —™

    অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

    সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

    ترجمة: ثناء الله نذير أحمد

    مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا

    সমকামী এবং তা থেকে মুক্তিকামী

    প্রশ্ন: আমি মুসলিম। আমার বয়স ষোল। আমি সব সময় সালাত আদায় করি ও সাওম পালন করি। আমি আমার জীবনে সৎ ও ভদ্র। তবে সমস্যা হল আমি সমকামী। শুরুতে আমি আমার পিতাকে নিয়ে ভাবতাম। আমার মনে হয় জেনিটিক কারণে আমি সমকামী হয়েছি। আমি খারাপ চিত্র দেখি। তবে আমি এ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাই। আমি জীবনে কখনো যৌনকর্মে লিপ্ত হই নি। আমি সত্যি সত্যিই আল্লাহকে ভয় করি। আমি তাঁকে সবসময়ই ডাকি যাতে তিনি আমাকে সাহায্য করেন।

    আপনার কাছে আমার আকুল আবেদন আপনি আমাকে বাস্তব কিছু পরামর্শ দেবেন যাতে আমি এ দুর্যোগ থেকে রেহাই পেতে পারি।

    উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ

    দো'আ করি আল্লাহ তোমাকে এ মারাত্মক ব্যাধি থেকে অতি দ্রুত আরোগ্য দান করুন। তোমার হৃদয়কে সকল পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করুন। নিশ্চয় আল্লাহ এ বিষয়ে ক্ষমতাবান।

    এ ধরনের বিশাল পাপে জড়িত হওয়ার শাস্তি যে শুধু পরকালেই হবে তা নয়; বরং দুনিয়ার জীবনেও এ শাস্তির অংশ বিশেষ ভোগ করতে হয়। যদি সার্বক্ষণিক আফসোস ও যন্ত্রণা হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে রাখে তাহলে এটাই তো শাস্তি হিসেবে যথেষ্ট। এর সাথে যদি মারাত্মক রোগ-ব্যাধি সংযোগ হয়, যেগুলোর ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একমত যে তা সমকামীদের হয়ে থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই। প্রশ্ন নং ১০০৫০ থেকে এ ব্যাপারে আরো দিক-নির্দেশনা নেবে বলে আশা রাখি।

    আর তোমার রোগের চিকিৎসা নিম্নবর্ণিতভাবে হতে পারে:

    এক. তোমাকে হৃদয় থেকে সত্যিকার অর্থে তাওবা করতে হবে। আল্লাহর দিকে ফিরে যেতে হবে। অতীতে যা করেছ তার জন্য লজ্জিত হতে হবে। বেশি বেশি দো'আ করতে হবে এবং কায়মনোবাক্যে আকুতি করতে হবে আল্লাহ যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি যেন তোমাকে এই বিষয় থেকে নিষ্কৃতি পেতে সহায়তা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ আরাধ্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেহেরবান এবং দো'আ কবুলে অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [الزمر: ٥٣]

    “বল, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু"[সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫৩]

    তাই তুমি আল্লাহর সামনে পড়ে যাও। কাঁদো, নিজের মনকে বিগলিত করে অশ্রু ঝরাও, তোমার হাজত ও দারিদ্র্য প্রকাশ করো। গুনাহ মাফ চাও। আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও বিপদমুক্তির জন্য আশাবাদী হও।

    দুই. নিজের হৃদয়ে ঈমানের বীজকে যত্ন করো। যখন এ-বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বেড়ে ওঠে, তখন তা দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানের কামিয়াবি নিয়ে আসে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসই, আল্লাহর তাওফীকের পর, বান্দাকে হারাম কাজ থেকে বাঁচায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেন নি, “ব্যভিচারকারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে মুমিন অবস্থায় থাকে না"(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৭)

    তাই ঈমান যখন তোমার হৃদয়কে কর্ষিত করবে। তোমার অন্তরাত্মা ও অনুভূতি ঈমান দিয়ে ভরে যাবে, তখন আর তুমি হারাম কাজ করতে সাহস পাবে না। আর মুমিন যদি একবার পড়ে যায় তাহলে সাথে সাথেই সে চৈতন্য ফিরে পায়। আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, যখন শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো কুমন্ত্রণা তাদেরকে স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়"[সূরা আল-আ'রাফ, আয়াত: ২০১]

    তিন. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুব-সমাজকে যে উপদেশ দিয়েছেন তা পালন করার চেষ্টা করো। আর তা হলো বিবাহের উপদেশ যদি তুমি এ ব্যাপারে সক্ষম হও। তোমার বয়স কম বলে অজুহাত দাঁড় করিও না। কেননা কম বয়স বিবাহের প্রতিবন্ধক নয়। কখনো না। যেহেতু তোমার বিয়ে করা জরুরি, তাই তোমার বেলায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্তাবে। তিনি বলেছেন, “হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার ক্ষমতাসম্পন্ন সে যেন বিয়ে করে ফেলে। কেননা তা দৃষ্টিকে অধিক অবদমনকারী, যৌনাঙ্গকে অধিক হিফাযতকারী। আর যে তা পারবে না, সে যেন সাওম পালন করে, এটা তার জন্য যৌন-উত্তেজনা দমনকারী। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৪০০) তুমি এ নববী উপদেশ আঁকড়ে ধরো, এতেই আল্লাহ চাহে তো তোমার প্রতিষেধক রয়েছে।

    তোমার মাতা-পিতাকে এ ব্যাপারে খোলাখুলি বলে বিবাহের আগ্রহ ব্যক্ত করাতেও কোনো সমস্যা নেই। লজ্জা যেন তোমাকে মাতা-পিতার কাছে খোলামেলা বলা থেকে বিরত না রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক হও।

    বিবাহের ব্যাপারে সিরিয়াসলি চিন্তা করো। দারিদ্র্যকে ভয় পেয়ো না; আল্লাহ তোমাকে তার করুণায় অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্য ও মহাজ্ঞানী"[সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছে যে, সৎ উদ্দেশে যে ব্যক্তি বিয়ে করল আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু 'আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই সাহায্য করেন: আল্লাহর পথে জিহাদকারী, আদায় করার আগ্রহ আছে এমন মুকাতেব গোলাম, পবিত্রতা রক্ষার ইচ্ছায় বিবাহকারী ব্যক্তি"(তিরিমিযী, হাদীস নং ১৬৫৫; নাসাঈ, হাদীস নং ৩১২০; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫১৮, আলবানী সহীহুত তারগীব ওয়াত-তারহীব গ্রন্থে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। দ্র: হাদীস নং ১৯১৭)

    চার. যদি বিবাহ সম্ভব না হয় তাহলে আরেকটি সমাধান হলো সাওম পালন করা। তাহলে তুমি মাসে তিন দিন সাওম পালন করার চিন্তা করছ না কেন অথবা প্রতি সাপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার?

    সাওম পালনে তো অনেক সাওয়াব রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে কুদসিতে বলেন, “আদম সন্তানের প্রতিটি আমল তার নিজের, তবে সাওম ব্যতীত। নিশ্চয় সাওম আমার এবং আমি-ই এর প্রতিদান দেব"(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫১)

    তাকওয়া সৃষ্টির উদ্দেশে আল্লাহ তা'আলা সাওমের বিধান দিয়েছেন মর্মে পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣﴾ [البقرة: ١٨٣]

    “হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর সাওম ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হবে"[সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩]

    সাওমের মধ্যে (প্রবৃত্তির টানে ছুটে যাওয়া থেকে যেমন রয়েছে সুরক্ষা, রয়েছে আল্লাহর কাছে বড় প্রতিদান) মানুষের ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় করা, ধৈর্য, সহনশীলতা, নাফসের খায়েস ও আনন্দদায়ক বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দীক্ষাও রয়েছে সাওমের মধ্যে। তাই সাওম পালনের ব্যাপার মনস্থির করো। আশা করা যায় আল্লাহ তোমার বোঝা হালকা করবেন।

    পাঁচ. হারাম জিনিসে দৃষ্টি দেওয়া থেকে নিজেকে সংবরণ করার ক্ষেত্রে কখনো অলসতা দেখাবে না। যেমন, অশ্লীল ম্যাগাজিন, বিবস্ত্র ছবি ইত্যাদি, যা পাপ ও অশ্লীল কর্মে জড়িয়ে যেতে মানুষকে উৎসাহিত করে, মনের মধ্যে খারাপ প্রভাব জিইয়ে রাখে। এসব থেকে আমরা সবাই আল্লাহর পানাহ চাই। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

    ﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ ذَٰلِكَ أَزۡكَىٰ لَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ خَبِيرُۢ بِمَا يَصۡنَعُونَ ٣٠﴾ [النور: ٣٠]

    “মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত"[সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]

    তোমার জেনে রাখা উচিত, যখন এ অবৈধ কাজ থেকে বিরত হওয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা করবে, শয়তানকে সুযোগ করে দেবে যাতে সে এর পরবর্তী পদক্ষেপকে তোমার সামনে সজ্জিত করে উপস্থাপন করতে পারে। সে এ কর্ম সম্পাদনের জন্য এ জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে যে, তুমি একবারের জন্য হলেও তার ইচ্ছার সামনে নতজানু হয়েছ।

    ছয়. যখন গুনাহ করার মনস্কামনা সৃষ্টি হবে অথবা এ পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য শয়তানের ওয়াসওয়াসা অনুভূত হবে, তখন স্মরণ করবে যে তোমার এসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাল কিয়ামতের মাঠে তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। তুমি কি জান না যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, এ যৌবন ও উদ্যম তোমার প্রতি আল্লাহ তা'আলার নি'আমত? এ নি'আমতকে পাপ অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যয় করলে, আল্লাহর আদেশ-নিষেধের বিরুদ্ধে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় করলে, আল্লাহ প্রদত্ত নি'আমতের কি শুকরিয়া আদায় হবে?

    আরেকটি বিষয় আছে যে ব্যাপারে তোমাকে সতর্ক হতে হবে, আর তা হলো আল্লাহ তা'আলার বাণী:

    “অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে, আর তারা তাদের চামড়াগুলোকে বলবে, কেন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে? তারা বলবে, আল্লাহ আমাদের বাকশক্তি দিয়েছেন যিনি সবকিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরই প্রতি তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে"[সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ২০-২১]

    হাদীসে এসেছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু 'আনহু বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং বললেন: “তোমরা কি জান, কী নিয়ে হাসছি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। বান্দা তার রবকে উদ্দেশ্য করে যা বলবে তা নিয়েই হাসছি। বলবে: হে আমার রব! তুমি কি যুলুম থেকে আমাকে আশ্রয় দাও নি? তিনি বলবেন: হ্যাঁ। অতঃপর বান্দা বলবে, তাহলে আমি নিজের ওপর নিজকে সাক্ষী মানা ব্যতীত অন্য কারও সাক্ষীকে বৈধতা দেব না। আল্লাহ বলবেন, 'তুমি নিজেই তোমার ওপর সাক্ষী হিসেবে আজ যথেষ্ট, আর রেকর্ডসংরক্ষণকারী ফিরিশতারাও সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। অতঃপর ব্যক্তির মুখ আটকে দেওয়া হবে। তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বলা হবে, কথা বলো, তখন তারা তার আমল সম্পর্কে বলবে। তারপর তাকে এসব কথা শোনার সুযোগ দেওয়া হবে। অতঃপর সে বলবে, 'তোমাদের ধ্বংস হোক, তোমরা নিপাত যাও। তোমাদের জন্যই আমি শ্রম-মেহনত করতাম"? (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯৫৯)

    সাত. লোকচক্ষুর অন্তরালে নিজের সাথে একান্ত হওয়া থেকে তুমি দূরে থেকো। কেননা তা যৌন বিষয়ে ভাবার কারণ হতে পারে। আর তোমার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হও। যেমন, সৎ কাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর, সালাত ইত্যাদি।

    আট. ফাসেক-ফুজ্জার অসৎ ব্যক্তিদের সঙ্গ ত্যাগ করো, যারা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যারা যৌন উত্তেজক কথাবার্তা বলতে অভ্যস্ত, গুনাহকে যারা তুচ্ছ করে পেশ করে এবং তা কর্মে পরিণত করতে নির্ভয়। ওদেরকে ছেড়ে তুমি সৎলোকদের সঙ্গ নাও, যারা তোমাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। তাঁর আনুগত্যের ব্যাপারে তোমাকে সহায়তা দেবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মানুষ তার বন্ধুর দীনের ওপর থাকে, অতঃপর কার সাথে বন্ধুত্ব করছ তা বিবেচনা করে নাও"(তিরমিযী, হাদীস নং ২৩৭৮, আলবাণী হাদীসটিকে সহীহুত তিরমিযীতে হাসান বলেছেন। (১৯৩৭)

    নয়. যদি ধরে নিই যে দুর্বলতার একমুহূর্তে তুমি পাপে নিপতিত হয়েছ, তবে আমার পরামর্শ থাকবে তুমি আর ওদিকে যেও না; বরং দ্রুত শক্তভাবে তাওবা করো। আশা করি, তুমি ঐ লোকদের দলভুক্ত হবে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন: “আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না"[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৫]

    প্রিয় ভাই! তুমি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। হুঁশিয়ার থাকো, শয়তান যেন তোমার ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে। তোমাকে যেন ওয়াসওয়াসা না দেয় যে আল্লাহ তোমার গুনাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। কেননা তাওবাকারীর জন্য আল্লাহ সকল গুনাহই ক্ষমা করে দেন।

    সমাপ্ত