যিনা-ব্যভিচারকারী পুরুষ অথবা নারী কি তাওবার পর বিবাহ করতে পারে?
ক্যাটাগরিসমূহ
উৎস
Full Description
যিনা-ব্যভিচারকারী পুরুষ অথবা নারী কি তাওবার পর বিবাহ করতে পারে?
هل يجوز للزاني أو الزانية الزواج بعد التوبة؟
< বাংলা - بنغالي - Bengali >
শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
الشيخ محمد صالح المنجد
অনুবাদক: মু. সাইফুল ইসলাম
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
ترجمة: محمد سيف الإسلام
مراجعة: د/ أبو بكر محمد زكريا
যিনা-ব্যভিচারকারী পুরুষ অথবা নারী কি তাওবার পর বিবাহ করতে পারে?
প্রশ্ন: আমি একজন মুসলিম নারী। আমি তিন বছর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করি। আমি এখনো শিখছি। আমার একটি প্রশ্ন আছে: আমি জেনেছি যে মুসলিম হওয়ার পর যদি অবৈধভাবে যৌনগমন করা হয় তাহলে ইসলামি পদ্ধতিতে বিবাহ করা যাবে না। কথাটা সঠিক কিনা জানতে চাই। যদি সঠিক হয় তাহলে যা অতীতে করেছি এবং যার ওপর আমি লজ্জিত তা শুদ্ধ করার উপায় কী?
উত্তর: আল-হামদুলিল্লাহ
যিনা-ব্যভিচারকারীর জন্য তাওবা করা অত্যাবশ্যক। কেননা ব্যভিচার মহাপাপসমূহের একটি। ইসলামি শরী'আত এসব বিষয় হারাম করেছে। আর যে এসব করবে তার জন্য রয়েছে ভয়ংকর শাস্তির ওয়াদা। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩﴾ [الفرقان: ٦٧، ٦٨]
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফসকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে"। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৮-৬৯]
ইসলামি শরী'আহ ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তিও নির্ধারণ করেছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿ٱلزَّانِيَةُ وَٱلزَّانِي ۡلِدُواْ كُلَّ وَٰحِدٖ مِّنۡهُمَا مِاْئَةَ جَلۡدَةٖۖ وَلَا تَأۡخُذۡكُم بِهِمَا رَأۡفَةٞ فِي دِينِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۖ وَلۡيَشۡهَدۡ عَذَابَهُمَا طَآئِفَةٞ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢﴾ [النور: ٢]
“ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশটি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ২]
হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার কাছ থেকে নাও, তোমরা আমার কাছ থেকে নাও। আল্লাহ তাদের ব্যাপারে পথের দিশা দিয়েছেন। অবিবাহিত পুরুষ-নারী ব্যভিচার করলে একশত বেত্রাঘাত ও এক বছরের জন্য দেশান্তরিতকরণ। আর বিবাহিত নারী-পুরুষ ব্যভিচার করলে একশত বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপ"। (সহীহ মুসলিম, আল-হুদূদ/৩১৯৯)
আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের ওপর ব্যভিচারকারী নারী পুরুষকে বিবাহ করা হারাম করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿ ٱلزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوۡ مُشۡرِكَةٗ وَٱلزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَآ إِلَّا زَانٍ أَوۡ مُشۡرِكٞۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٣﴾ [النور: ٣]
“ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের ওপর এটা হারাম করা হয়েছে"। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩]
যদি ব্যভিচারকারী সত্যিকার অর্থে দৃঢ়চিত্তে তাওবা করে, তাহলে আল্লাহ তা'আলা তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। ব্যভিচারকারীর পরকালীন শাস্তির ওয়াদার কথা উল্লেখের পর আল্লাহ তা'আলা বলেন,
﴿إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَئَِّاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٧٠ وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا فَإِنَّهُۥ يَتُوبُ إِلَى ٱللَّهِ مَتَابٗا ٧١﴾ [الفرقان: ٦٩، ٧٠]
“তবে যে তাওবা করে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যে তাওবা করে এবং সৎকাজ করে তবে নিশ্চয় সে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে"। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৯-৭০]
যদি সত্যিকার তাওবা অর্জিত হয় তবে এ পাপ থেকে সরে আসার পর তাদের সাথে বিবাহ করা বৈধ রয়েছে।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম রহ.-কে ব্যভিচারিণী নারীর সাথে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন: তাওবা না করা পর্যন্ত ব্যভিচারিণীর সাথে বিবাহ বৈধ নয়। যদি কোনো পুরুষ তাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে বিবাহের পূর্বে একটি ঋতুস্রাব অতিক্রম হতে দেবে। পেটে বাচ্ছা আছে বলে প্রমাণিত হলে প্রসবের আগ পর্যন্ত বিবাহ বৈধ হবে না।
(দেখুন: আল ফাতওয়া ওয়াল জামেয়া লিল মারআতিল মুসলিমা: ২/৫৮৪)